নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় হাদিস (পাঠ ১৪)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | NCTB BOOK
300
Summary

জীবনের সকল ক্ষেত্রে মনুষ্যত্ব ও নীতি-আদর্শের শিক্ষাকে ধরে রাখার চেষ্টা নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে। একটি আদর্শ সমাজ গঠনের জন্য এই মূল্যবোধ অপরিহার্য।

নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ মানুষকে উত্তম চরিত্রবান করে, যা সামাজিক সম্মান ও মর্যাদা অর্জনে সহায়ক। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি গুরুত্বপূর্ণ, অন্যথায় দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চুরি ইত্যাদি সমস্যার উদ্ভব ঘটে এবং মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়।

হাদিসের মাধ্যমে মহানবি (স.)-এর আদর্শ ও আচরণের নির্দেশনা পাওয়া যায়। তিনি সদ্গুণগুলো, যেমন দয়া, ক্ষমা ও ভালোবাসা অনুশীলনের জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং মিথ্যা, চুরি ও অন্যান্য খারাপ অভ্যাসগুলো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

হাদিসে মহানবির (স.) মহান চরিত্র ও সৎ গুণাবলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন সত্যবাদিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা। তিনি সবসময় সত্য কথা বলতেন এবং তাঁর জীবন আদর্শ নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের নমুনা।

মহানবির চরিত্র অনুসরণ করলে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ লঙ্ঘিত হবে না এবং এটি মানুষকে প্রকৃত মানব হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

জীবনের সকল ক্ষেত্রে মনুষ্যত্ব ও নীতি-আদর্শের শিক্ষাকে ধরে রাখার চেষ্টা ও চেতনাই হলো নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ। আদর্শ সমাজ গঠনের জন্য এ মূল্যবোধের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ মানুষকে উত্তম চরিত্রবান করে গড়ে তোলে। ফলে মানুষ সমাজে সম্মান ও মর্যাদা লাভ করে। সকলে এ আদর্শ অনুশীলন করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
অন্যদিকে সমাজে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ না থাকলে সমাজে শান্তি থাকে না। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারণা ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে দয়া, মায়া, ঐক্য, ভালোবাসা ইত্যাদি সদ্গুণাবলির চর্চা থাকে না। মানুষ পরস্পরকে অবিশ্বাস ও সন্দেহ করে। ফলে সমাজে নানা অরাজকতা ও অশান্তির সৃষ্টি হয়।
মহানবি (স.)-এর হাদিস নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা পূর্বপাঠে হাদিসের পরিচয় লাভ করেছি। হাদিসের মাধ্যমে আমরা প্রিয় নবি (স.)-এর বাণী ও কর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। তিনি মানুষের সাথে কীরূপ আচরণ করতেন তা জানতে পারি। তাঁর উত্তম চরিত্রের কথা জানতে পারি। তিনি আমাদের জন্য কী দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন তাও আমরা হাদিস পড়ে জানতে পারি।

হাদিস শরিফে প্রিয় নবি (স.) আমাদের নানাবিধ নৈতিক ও মানবিক আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। দয়া, ক্ষমা, সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা, পরস্পর সহযোগিতা ইত্যাদি গুণ অনুশীলনের জন্য উৎসাহিত করেছেন। আবার মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা, চুরি-ডাকাতি করা, গালিগালাজ করা, ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা ইত্যাদি খারাপ কাজ করতে আমাদের নিষেধ করেছেন। হিংসা-বিদ্বেষ, গর্ব-অহংকার, খোশামোদ-তোষামোদ ইত্যাদিও খারাপ অভ্যাস। এগুলো মানবিক আদর্শের বিপরীত। এগুলো নৈতিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে। এগুলো থেকেও বিরত থাকার জন্য মহানবি (স.) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-

إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْخَطَبَ أَبُوْدَاوُدٍ)

অর্থ: 'তোমরা হিংসা থেকে বিরত থাকবে। কেননা আগুন যেমন কাঠকে পুড়িয়ে দেয় হিংসাও তেমনি নেক আমলসমূহকে ধ্বংস করে দেয়।' (আবু দাউদ)

সৎগুণাবলির অনুশীলন ও অসৎ গুণাবলি থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে আমরা উত্তম চরিত্রবান হতে পারি। এগুলো আমাদের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষায়ও সাহায্য করে। এভাবে হাদিসের শিক্ষা আমাদের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
হাদিস শরিফে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনচরিত ও উত্তম চরিত্রের আদর্শ বর্ণিত আছে। আমাদের প্রিয় নবি (স.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলেছেন-

وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ

অর্থ: "আর নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।" (সূরা আল-কালাম, আয়াত: ৪)

মহানবি (স.) ছিলেন সর্বোত্তম মানুষ। তিনি সবসময় নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি অনুসরণ করতেন। তাঁর একটি উপাধি ছিল আল-আমিন। আল-আমিন অর্থ বিশ্বাসী, বিশ্বস্ত, সত্যবাদী। তিনি সবসময় সত্য কথা বলতেন। কথা ও কাজে সততা অবলম্বন করতেন। কেউ কোনো কিছু আমানত বা গচ্ছিত রাখলে তিনি তা মালিকের নিকট যথাযথভাবে ফেরত দিতেন। তিনি কখনো মিথ্যা বলতেন না, ওয়াদা ভঙ্গ করতেন না, বিশ্বাসঘাতকতা করতেন না। ফলে তাঁর শত্রুরাও তাঁকে আল-আমিন বা বিশ্বাসী নামে ডাকত।
এভাবে দেখা যায়, সবধরনের সৎগুণ রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চরিত্রে বিদ্যমান ছিল। তিনি ছিলেন ক্ষমাশীল, দয়াবান, অতিথিপরায়ণ, মিষ্টভাষী। তিনি অন্যায় ও অশ্লীল কাজ কখনো করতেন না। অশালীন চলাফেরা ও কথাবার্তা তাঁর থেকে কখনো প্রকাশিত হয়নি। সারাজীবন তিনি মানুষকে উত্তম চরিত্র সম্পর্কে হাতেকলমে শিক্ষা দিয়েছেন। রাসুলের (স.) এ আদর্শ নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষার উজ্জ্বল প্রমাণ। প্রিয় নবি (স.)-এর চরিত্র অনুসরণ করলে কখনোই নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ লঙ্ঘিত হবে না। বরং এর দ্বারা আমরা প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারব। আমাদের মধ্য থেকে দুর্নীতি ও পশুত্ব দূরীভূত হবে। রাসুলের (স.) জীবনাদর্শ হাদিস শরিফে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। এগুলো মানুষের জন্য দিকনির্দেশনা স্বরূপ। আমরা হাদিস পড়ে এগুলো জানব এবং সে অনুযায়ী আমল করব।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...